তিতির মুরগি: হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য থেকে সম্ভাবনাময় খামার ব্যবসা
বাংলার গ্রামীণ জীবনে একসময় দেশি মুরগির পাশাপাশি তিতির মুরগির উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্রামবাংলার অনেক পরিবারই ভালোবেসে একে “চীনা মুরগি” বলতেন। সহজে খাবার সংগ্রহ, স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর ন্যূনতম যত্নেই এরা বেড়ে উঠত। কিন্তু আধুনিক বাণিজ্যিক জাতের মুরগির প্রসারে ধীরে ধীরে এই পাখি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ পুষ্টি ও লাভজনকতার দিক থেকে তিতির আজও একটি অনন্য সম্ভাবনা। সঠিক খামার ব্যবস্থাপনায় এদের চাষ আবারো লাভজনক খাত হয়ে উঠতে পারে।
তিতিরের উৎপত্তি ও বাংলাদেশে বিস্তার
তিতির মুরগির উৎপত্তি আফ্রিকা মহাদেশে। প্রায় সাত শতক আগে আফ্রিকায় এদের প্রথমবার গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালন শুরু হয়। পরবর্তীতে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই পাখি ছড়িয়ে পড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এর প্রচলন ঘটে। একসময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনাঞ্চলে বন্য তিতির দেখা যেত, তবে বর্তমানে এরা প্রায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি।
ডিম ও মাংসের গুণাগুণ
মাংস: তিতির মাংস স্বাদে অতুলনীয় এবং এতে চর্বি তুলনামূলক কম থাকে। বন্য পাখির মাংসের মতো স্বাদ হওয়ায় এটি রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলোতে আলাদা চাহিদা তৈরি করেছে। পূর্ণবয়স্ক একটি তিতির সাধারণত ১.৫–২ কেজি ওজনের হয়।
ডিম: শক্ত খোসাযুক্ত তিতিরের ডিম পরিবহনে সহজ এবং নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম। বছরে একটি মাদি তিতির প্রায় ১২০–১৫০টি ডিম দিতে সক্ষম, যা বাজারে বিশেষ মূল্যবান।
কেন তিতির পালন লাভজনক?
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: তিতির দেশি মুরগির চেয়েও বেশি রোগ সহনশীল। ফলে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই কম।
- খাদ্য ব্যয় কম: এরা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ঘাস, পোকামাকড় ও ঝোপঝাড়ের খাদ্য খেয়ে নিজেদের পুষ্টি পূরণ করে। প্রায় ৬০% খাবারের চাহিদা নিজেরাই মেটাতে পারে।
- আর্থিক সম্ভাবনা: কম খরচে পালিত হলেও এর মাংস ও ডিম উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। তাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি লাভজনক খামার ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে।