মেছোবিড়াল — কৃষি অর্থনীতির বন্ধু

মেছোবিড়াল (Fishing Cat) বাংলাদেশের জলাভূমি, খাল-বিল ও ধানক্ষেতের এক গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী। দেখতে গৃহপালিত বিড়ালের মতো হলেও এটি একটি বন্য বিড়াল, যা “অতি বিপন্ন প্রজাতি” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
🔹 জীববৈজ্ঞানিক পরিচিতি
- বৈজ্ঞানিক নাম: Prionailurus viverrinus
- পরিবার: Felidae
- আয়ুষ্কাল: প্রায় ১০ বছর
- বাসস্থান: নদী, খাল, বিল, হাওর, ধানক্ষেত
- খাদ্যাভ্যাস: মাছ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর ইত্যাদি
মেছোবিড়ালের পায়ে জালিকার মতো অংশ থাকে, যা তাকে জলে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বন্য বিড়াল যে মাছ শিকার করে খায়।
🌾 কৃষিতে মেছোবিড়ালের ভূমিকা
এই প্রাণীটি ধানক্ষেত ও গুদামের ইঁদুর দমন করে কৃষি উৎপাদন রক্ষা করে। বন অধিদপ্তরের হিসাবে, একটি মেছোবিড়াল তার জীবনে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার সমমূল্যের ফসল রক্ষা করতে পারে।
⚖️ আইনগত সুরক্ষা (Wildlife Act 2012)
“বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২” অনুযায়ী — মেছোবিড়াল একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী। ধারা ৩৬ ও ৩৮ অনুসারে, কেউ যদি এটি হত্যা, ধরার চেষ্টা বা ক্ষতি করে:
- সর্বোচ্চ শাস্তি: ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড
- অথবা জরিমানা: সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
- অথবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হতে পারে
🚫 ভুল ধারণা ও বাস্তবতা
অনেকে ভুল করে মনে করেন মেছোবিড়াল হাঁস-মুরগি মারে, তাই হত্যা করা উচিত। বাস্তবে তারা মূলত মাছ, ব্যাঙ ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকেরই উপকার করে। মেছোবিড়াল নিধন করলে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং ফসলের ক্ষতি হয়।
🌏 সংরক্ষণে করণীয়
- মেছোবিড়াল দেখলে ভয় না পেয়ে বন বিভাগে খবর দিন।
- গ্রামে সচেতনতা বাড়ান — এটি গৃহপালিত নয়, বন্যপ্রাণী।
- ধানক্ষেত, খাল, বিলের দূষণ কমান।
- বাচ্চাদের শেখান — “প্রতিটি প্রাণ প্রকৃতির অংশ।”
📞 জরুরি যোগাযোগ
বন অধিদপ্তর হটলাইন: ১৬১২৩
Wildlife Crime Unit: wildlifecrimeunit@gmail.com
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
মেছোবিড়াল কেন সংরক্ষণ করা জরুরি?
কারণ এটি ইঁদুর ও পোকামাকড় দমন করে কৃষি উৎপাদন বাড়ায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
মেছোবিড়াল মারা গেলে কী শাস্তি হতে পারে?
Wildlife Act 2012 অনুযায়ী, ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, বা উভয় দণ্ড হতে পারে।