টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি | VetDrBD

Vetdrbd
0
টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি | VetDrBD

টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি

টাইগার মুরগি পালন (tiger murgi palon) পদ্ধতি সম্পর্কে খামারিদের কিছু তথ্য দিতে চাই। কেননা ইদানিং বাংলাদেশের খামারিরা টাইগার মুরগি পালন অধিক লাভজনক মনে করছেন। হ্যাঁ, লাভজনক তো বটেই কিন্তু সবাই কি লাভ করতে পারছেন? পারেছেন না।

তাহলে সমস্যা টা কোথায়? সমস্যা মূলত বাচ্চার দাম ও খামার ম্যানেজমেন্টে। অর্থাৎ বাচ্চার দাম এতগুলো যে, যদি খরচ কমিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন অর্জন করা না যায়, তাহলে লাভ আসবে না।

টাইগার মুরগির পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

টাইগার মুরগি হলো দেশি সোনালী (Desi Murgi) মুরগির সাথে দ্রুত বর্ধনশীল জাতের মুরগির ক্রস করে তৈরি করা একটি হাইব্রিড সংস্করণ। এটি কোন বিশেষ জাত নয়। বিশ্বের মুরগি জাতসমূহের মধ্যে “টাইগার” নামে পৃথক জাত নেই — বরং এটি দেশী মুরগির একটি দ্রুতবৃদ্ধিশীল হাইব্রিড।

বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো। ডিম থেকে বাচ্চা উৎপন্ন করে বিক্রি করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

টাইগার মুরগি পালনে সমস্যা

Tiger murgi palon করতে কিছু সমস্যা বা অসুবিধা রয়েছে — বিশেষতঃ খাদ্য ব্যয়, বাচ্চার উচ্চ মূল্য এবং সঠিক ম্যানেজমেন্ট না থাকলে। ফলে শুধুমাত্র হুজুগে লাফিয়ে তথ্য দেখে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

খাবার তালিকা ও ব্যবস্থাপনা

কারণ এটি দ্রুত বর্ধনশীল মুরগি, তাই এর খাদ্যে প্রোটিন সোনালী মুরগির চেয়ে বেশি থাকা উচিত। অনেক খামারি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য খাওয়ায় — যা উৎপাদন ভালো দিলে ও ভিন্নতা আনলেও খরচ বেশি হয়। ভালো কোম্পানির সোনালীর খাদ্য ব্যবহার করা যায়।

নিজে খাদ্য প্রস্তুত করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায় — কিন্তু সেখানে উপকরণের সঠিক অনুপাত বজায় রাখতে হবে। বাড়ন্ত মুরগির খাদ্যে প্রোটিন কমপক্ষে ১৮% এবং ফ্যাট ৫% থাকা উচিত।

পালন পদ্ধতি

দেশি মুরগির মত ছেড়ে (free-range) অথবা খামারে আবদ্ধ অবস্থায় (confined) — দুইভাবেই পালন করা যায়। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে বা খাঁচায় পালন উপযুক্ত। খামারে আবদ্ধভাবে পালনের ক্ষেত্রে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির পালন পদ্ধতি অনুসরণ করা উত্তম।

  • ২ মাসে প্রায় ১.৫ কেজি ওজন হয়।
  • মোরগের সর্বোচ্চ ওজন ৭–৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
  • মুরগীর সর্বোচ্চ ওজন ৩–৪.৫ কেজি।
  • প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণ প্রায় ১৫০ গ্রাম।
  • ৫–৬ মাসে পরিপূর্ণ ডিমে আসে।
  • বছরে ১৫০–২০০টি ডিম দিতে পারে (পরিচর্যসাপেক্ষ)।
  • বাচ্চার দাম—প্রতি পিস প্রায় ₹৭০–৮০ (বাংলাদেশি টাকা অনুযায়ী ৭০–৮০ টাকা) — বাজার অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

হুজুগে সাবধানতা

আমাদের দেশে অনেক ইউটিউবার/ফেসবুকার কখনো টার্কি, কখনো কাদাকনাথ বা টাইগার মুরগি পালন করে লাভ দেখিয়ে হুজুগ সৃষ্টি করে। এ ধরনের প্রচারণায় অনেক নতুন খামারি বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই হঠাৎ হুজুগে না গিয়ে ধীরে-ধীরে, অভিজ্ঞতা নিয়ে খামার শুরু করো — ছোট স্কেলে।

শীতে মুরগির ফার্মে বিশেষ সতর্কতা

শীতে ভাইরাসজনিত রোগ-প্রাদূর্ভাব বাড়ে। শীত শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন ও প্রতিষেধক প্রয়োগ এবং বায়ো-সিকিউরিটি জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • ফার্মের বায়ো-সিকিউরিটি জোরদার করুন।
  • হাট-বাজার থেকে সরাসরি হাঁস-মুরগি আনা এড়িয়ে চলুন।
  • খামারের চারিপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন; শেডের ভিতর ও বাহিরে ৩:১ অনুপাতে চুন এবং ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করুন।
  • এক থেকে দুই দিন পর পর জীবানুনাশক শেডের ভিতর এবং বাহিরে স্প্রে করুন।
  • মেঝের লিটার সবসময় শুকনো ও ঝরঝরে রাখার চেষ্টা করুন।
  • প্রতি ১০ বর্গফুট জায়গার জন্য ২৫০ গ্রাম হারায় চুন মেশান ও লিটার উলটেপালট করে মিশিয়ে দিন (দুই সপ্তাহ অন্তর)।
  • শীত শুরু হওয়ার আগেই জরুরি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন।
  • খামারে বন্য প্রাণী প্রবেশ প্রতিরোধ করুন।
  • নিজে ও কর্মীদের বায়ো-সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিন।
  • ভেটেরিনারি পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • মুরগির ক্লাইমেট কন্ট্রোল — তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করুন।

খামারি হিসেবে মানসিকতা ও বাস্তব পরামর্শ

সফলতার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ ও শিখুন। ব্যবসায় অভিজ্ঞতা বছর জুড়ে লাভ-লোকসানের মাধ্যমে আসে — তাই ধৈর্য ধরে, শিল্প-গবেষণা ও পর্যাপ্ত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করুন।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১) টাইগার মুরগির বাচ্চা (চিক) কখন বিক্রি করা ভালো?

সাধারণত ২–৪ সপ্তাহ বয়সে বাচ্চা ন্যূনতম পর্যবেক্ষণ ও ভ্যাকসিন দিয়ে বিক্রি করা যায়। তবে বাজার ও চাহিদা ভেদে ৬–৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বজায় রেখে বিক্রি করলে মূল্য বাড়তে পারে।

২) কিশোরকালীন পর্যায়ে বাচ্চাদের জন্য আদর্শ খাদ্য অনুপাত কী?

বাড়ন্ত মুরগির (grower) খাদ্যে প্রোটিন ≈ 18% এবং ফ্যাট ≈ 5% রাখা উচিত। ফিড বানাতে গেলে পরিচ্ছন্নতা ও কাঁচামালের মান বজায় রাখতে হবে।

৩) শীতকালে মুরগিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা?

বায়ো-সিকিউরিটি, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, সঠিক ভ্যাকসিনেশন ও লিটার-এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে অত্যাবশ্যক। শীতকালে ভাইরাল রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়—তাই আগেভাগে ব্যবস্থা নিন।

৪) যদি মুরগিতে রোগ দেখা দেয়, কী করা উচিত?

প্রথমে আক্রান্ত অংশ আলাদা করে আইসোলেট করুন, বায়ো-সিকিউরিটি জোরদার করুন এবং নিকটস্থ ভেটেরিনারির সাথে পরামর্শ নিয়ে টেস্ট ও নির্দিষ্ট চিকিৎসা করুন। নিজের ঠিকঠাক জ্ঞান না থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না।

৫) খামার শুরু করার জন্য কেমন আকারে বিনিয়োগ শুরু করা উচিত?

নতুনদের জন্য ছোট আকারে শুরু করে ১–২ লট ধরে অভিজ্ঞতা নেয়া উত্তম; পরে বাজার বুঝে স্কেল বাড়ান। হঠাৎ বড় ইনভেস্টমেন্ট হুমকিতে ফেলতে পারে।

লেখক: Dr. Junaed Ahmad
Veterinary Practitioner & Consultant
BVC No: 10143 | VetDrBD

Post a Comment

0 Comments

Post a Comment (0)
3/related/default